কালবৈশাখীর তান্ডবে সুনামগঞ্জে খোলা আকাশের নিচে হাজারো মানুষ

কালবৈশাখীর তান্ডবে সুনামগঞ্জে খোলা আকাশের নিচে হাজারো মানুষ

শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ থেকে: মাত্র ১০ মিনিটের প্রলয়ংকারি কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে লন্ড ভন্ড হয়ে গেছে সবকিছু। স্মরণকালের ভয়াবহ ঝড়ে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, গাছগাছালি, বৈদ্যুতিক খুুঁটিসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামে। মাথা গোঁজার ঠাঁই-বসতভিটা হারিয়ে খোলাকাশের নিচে অনিশ্চিত মানবেতর জীবন যাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার হাজারো মানুষ। দ্রুতই এসব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরকারি বেসরকারি সহায়তার দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরুপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন। 

সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমপাগলা ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের বিধবা হুমেরা এক বছর আগে দুর্ঘটনায় স্বামী হারান। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে টিনসেটের ঘরে কোনোভাবে বসবাস করে আসছিলেন এই অসহায় নারী। ভয়াবহ ঝড়ে মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকোও ছিনিয়ে নেয়। ছেলেমেয়েদের নিয়ে খাটের নিচে অবস্থান করে প্রাণ রক্ষা করলেও দানব ঝড়ে তছনছ করে দেয় তাঁর বসতভিটা। হুমেরা বেগমের মতো ঝড়ের কবলে মাথাগোঁজার ঠাঁই হারিয়েছেন অসংখ্য পরিবার । গৃহহীন অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে অনিশ্চিত মানবেতর সময় পার করছেন জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের রায়পুর, রবিনগর, শুক্রমর্ধণ, ইনাতনগর, চন্দ্রপুর, আসামপুর, বাঘেররকোনা, হাজিপাড়া, জয়কলস ইউনিয়নের সদরপুর, কামরুপদলং, আস্তমা এবং সদর উপজেলার সাহেবনগর, বড়পাড়া, কালিবাড়ি, বড়পাড়াসহ অন্তত ১৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। 
জানা যায়, গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলার সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবল গতিতে বজ্রসহ কালবৈশাখী ঝড় বয়ে বয়ে যায়। ১০ মিনিটের এই ঝড়ের তান্ডবে এই দুই উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামে তিন শতাধিক কাঁচা ও আধাপাকা টিনসেট ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসময় গাছ উপড়ে ও ঘরবাড়ির উপর চাপা পড়ে আহত হন নারী শিশুসহ শতাধিক মানুষ। প্রবল ঘুুর্ণিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ছোট বড় অসংখ্য গাছ উপড়ে ঘরবাড়ি ও সড়কে পড়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ। 
এদিকে ঝড়ের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে যাওয়ায় মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি বেসরকারি সহায়তার দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।

পশ্চিমপাগলা ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের দিনমজুর  সাইফুল হক বিধবা মাকে নিয়ে একটি টিনসেটের ঘরে বসবাস করে আসছিলেন। রাতের আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে একমাত্র সম্বল বসতঘরটি তছনছ করে যায়। নি¤œআয়ের একমাত্র উপার্জনক্রম সাইফুলের চোখেমুখে বিষণœতার ছাপ। চারদিকে ধংসযজ্ঞ। কাকে কে সহযোগিতা করবে। তাই নিরুপায় হয়ে বিধবা পিয়ারা বেগমকে  নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অর্ধাহারে অনিশ্চয়তার সময় পার করছেন সাইফুল। আবেগে আপ্লুত হয়ে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত এই পরিবারটি। 

একই গ্রামের বিধবা নেগার বেগম ৪ মেয়েকে নিয়ে বিলাপ করছেন। ঝড়ে বিধস্ত ঘরবাড়ি কিভাবে মেরামত করবেন । কোথায় টাকা পাবেন  এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তার। সফেদা জানান, রাতে ঝড়ের কবলে মারাত্মক আহত হলেও কোনোভাবে নিজের ও সন্তানদের জীবন বাঁচাতে পেরেছেন। কিন্তু দানব ঝড়ের কাছে নিরুপায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে তাকে। এই অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন এই অসহায় নারী। 

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম বড়পাড়ার সফেদা বেগমের পবিবারে ৭ সদস্য। রাতে সবার সাথে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়ার সময় ঝড়ে টেবিলের নিচে আশ্রয় নিয়ে প্রাণরক্ষা তাদের। ঝড়ে দুমড়ে মুচড়ে যায় ঘরবাড়ি। সফেদা বলেন, কেউ আমাদের দেখতে আসেনি। আমরা অসহায় অবস্থায় পড়ে আছি। ঘরে কোনো খানি খাদ্য নেই। সব নষ্ট হয়ে গেছে। 

এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শন করেছেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, পুলিশ সুপার এহসান শাহসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তার আশ^াস দেন।

ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের তালিকা করার কথা বলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকাবাল চৌধুরী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ত্রাণ সহযোগিতা হিসেবে জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা সহায়তা করা হচ্ছে। ঘরবাড়ি পুনর্বাসনের জন্য ঢেউটিন প্রদান করার কথা জানান তিনি।